বিগত দু দু’টি বিশ্বযুদ্ধ ব্যতিত বিশ্ববাসী এমন বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় আর কখনও দেখেনি। চীনের উহান প্রদেশ থেকে করোনা নামের যে ভাইরাসটির উৎপত্তি তা আজ সারা বিশ্বকে থমকে দিয়েছে।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ আজ উন্নত রাষ্ট্রগুলিও আজ এই ভাইরাস মোকাবেলায় হিমসিম খাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ এই ভাইরাসের কারনে গৃহবন্দী, যা মানব ইতিহাসে বিরল। যেহেতু এই ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক অদ্যাবধি আবিস্কার হয়নি তাই পূর্ব-সচেতনতাই এই ভাইরাস হতে মুক্তির সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। বর্তমানে এই ভাইরাসের কারনে প্রায় সকল রাষ্ট্রেই আর্থ-সামাজিক কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষ খাদ্য-শস্যের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে অথচ পারস্পারিক ভালবাসা, সহমর্মিতা, আন্তরিকতা দিয়ে এই জটিল পরিস্থিকে কিছুটা হলেও মোকাবেলা করা যেতে পারে, এর জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র ইতিবাচক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসাবে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই ভাইরাসকে আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো বলে মনে করি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় জাতি হিসাবে আমাদের মধ্যে মানবিক আচরণ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর এতই অভাব যে, আমরা আজ এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি। যা সাধারণ মানুষকে এই বিপদের মধ্যে আরও বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এটা কেবলমাত্র দেশের প্রচলিত আইনেরই পরিপন্থি নয় বরং ধর্মীয় দৃষ্টিকোন হতেও এটা সম্পূর্ণ নিষেধ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের উচিৎ প্রত্যেকের সামর্থ অনুযায়ী একে অপরের পাশে দাড়ানো, পণ্যের বেআইনী মজুদ না করা, দ্রব্যমুল্যের বৃদ্ধি না করা। বর্তমানে সবচেয়ে বেশী মানবেতর জীবনযাপন করছে দিনমজুর, যারা দিন আনে দিন খায়। তাদের পাশে দাড়ানো আজ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের সমাজের সামর্থবান একজন যদি পাশের অসহায় একজনকে মানবিক, আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারি তাহলে আমরা এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারি। বর্তমান পরিস্থিতি যত দীর্ঘ হবে সমাজের দরিদ্র মানুষের জীবন ধারণও তত কঠিন হতে কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বর্তমান পরিস্থিতি হয়তো ১/২ মাস দীর্ঘ হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী পবিত্র রমজানেও এই ভাইরাস ও ভাইরাসের প্রভাবে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের এখন থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে।দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে ইতিমধ্যেই এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি সরকার যদি একটু কঠোর হয়ে মুনাফা লোভী ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে সেই সাথে সমাজের দরিদ্র ও কম আয়ের মানুষদের কথা চিন্তা করে কম দামে প্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে তাহলে দরিদ্র ও কম আয়ের মানুষগুলো উপকৃত হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জননিরাপত্তায় সরকারকেই অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে। এক তথ্য মতে দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দ আইসিইউ মাত্র ২৯টি। প্রতিটি আইসিইউ এর বিপরীতে মানুষ আছে প্রায়৬৯ লক্ষ। এটা দেশের স্বাস্থ্য খাতের এক ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করে। তাই সরকারকে জরুরী ভিত্তিতে করোনা মোকাবেলার প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল যন্ত্রাংশ ও ঔষধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তবে করোনার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধকে সহজ করে দিবে যদি আমরা জাতি হিসাবে ৭১ এ মত ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি।এখন আমাদের সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে কোন কিছু দেখার নেই। উদার আর সহমর্মিতার মানসিকতানিয়ে সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশের যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘পাথওয়ে’ কাজ করে থাকে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারনে উদ্ভত সমস্যায়ও পাথওয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতনসহ গরীব ও দিনমজুর অসহায় লোকদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের কর্মসূচী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পাথওয়ের উদ্যোগে ঢাকা শহরের প্রায় ১০,০০০ দরিদ্র লোকের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। পাথওয়ের পক্ষ থেকে দেশ-বিদেশের আগ্রহী বিত্তশালীদের দেশের এই দুর্যোগের সময় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ের সাথে এগিয়ে আসার জন্য উদ্বাত্ত্ব আহব্বান জানানো যাচ্ছে। আপনাদের যেকোন ধরনের সহযোগিতা আমরা পাথওয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিব। আসুন মানবতার ডাকে আমরা সাড়া দেই। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হউন।