করোনায় আমাদের কিছু কথা
প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। যে কোন দুর্যোগ মাহামারি প্রকৃতির এক নির্মম তান্ডব। কখন কিভাবে এই অপার সুন্দর পৃথিবীকে দুমড়ে-মুচড়ে একাকার করে দেয় কেউ তা বলতে পারে না।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশের মানচিত্র অর্জনেও রয়েছে অনেক ইতিহাস। পাকিস্তানের সাথে ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধ হয়, সেই যুদ্ধে আমি অংশ গ্রহণ করতে পারি নাই। লোক মুখে শুনেছি সেই যুদ্ধের অনেক করুণ ও বিভৎস কাহিনী। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে শত্রুমুক্ত করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সু-প্রতিষ্ঠিত করে। আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। সাত কোটি বাঙালী থেকে আজ আমরা ১৮ কোটি বাঙালী। হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনুন্নত দেশ থেকে স্বল্পউন্নত দেশে রূপ লাভ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ কোভিড-১৯ নামে এক মরণঘাতক অদৃশ্য শত্রুর আগমন, যার প্রভাবে গোটা পৃথিবীর সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায়। ধনী দেশগুলো বে-সামাল হয়ে পড়ে চিকিৎসা সেবা ও লাশ দাফন/সমাধি/সৎকার দিতে দিতে। এক পর্যায়ে লাশ ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সেই দৃশ্য দেখে আমাদের দেশে শুরু হয় লকডাউন। সামাজিক যোগাযোগে তৈরি হয় দুরত্ব, কলকারখানা, অফিস, আদালত, স্কুল ও কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। শুরু হয় অর্থনৈতিক মন্দা। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী সকল নাগরিকের চোখে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। দেখা দেয় খাদ্যাভাব, ব্যহত হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সকল চিকিৎসা সেবা। কর্মহীন হয়ে পড়ে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ, অনেকে চাকুরীচ্যুত হন। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে অসহায় ঘরবন্দি মানুষজন রাস্তায় নেমে আসে এক মুঠো খাবারের অন্বেষনে এবং দেশের অনেক জায়গায় করোনা আক্রান্ত মৃতব্যক্তির লাশ দাফনে আসে অনেক সামাজিক বাঁধাবিপত্তি। এমন দৃশ্য দেখে আমি খুবই মর্মাহত ও বিচলিত হই। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং পাথওয়ে’র ফেসবুক পেইজে আহ্বান জানাই, যাদের সাহায্য প্রয়োজন তাঁরা যেন পাথওয়ে’র সাথে যোগাযোগ করে। কিছু সময়ের ব্যবধানে সাহায্যের জন্য পাথওয়ে’র ফেসবুক পেইজে প্রচুর অনুরোধ আসে। সহযোগিতার হাত বাড়াতে মাঠে নামে পাথওয়ে’র স্বেচ্ছাসেবক দল। শুরু হয় প্যাকেটজাত শুকনো খাবার এবং রান্না করা খাবার বিতরণ এবং লাশ দাফনের জন্য পাথওয়ের একটি কমিটি গঠন করি। এমনকি নাম পরিচয় গোপন রেখে মধ্যবিত্ত অসহায় পরিবারের মাঝে ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার পৌঁছে দেয়া এবং সমাজে অবহেলিত বৃহত্তর মিরপুরে বসবাসরত তৃতীয় লিঙ্গ সম্পদায়ের খাদ্য সহায়তা। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও নিজের সবটুকু সামর্থ দিয়ে অসহায় মানুষের সেবাদান অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করেছি।
তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে অনুরোধ রইল। আমরা যেন একে অপরের প্রতি যে কোন বিপদে সহানুভুতিশীল হই। কেননা কোন সমস্যাই চিরদিন থাকে না। আমরা প্রত্যেকেই যেন পরস্পর পরস্পরের প্রতি যে কোন দুর্যোগ মহামারিতে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। তবেই এগিয়ে যাবো আমরা ১৮ কোটি বাঙালী এবং এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
মোঃ শাহিন
নির্বাহী পরিচালক, পাথওয়ে