পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক
ইফতার সেবা কার্যক্রম-২০২১
সুধী,
আস্সালামু আলাইকুম। “পাথওয়ে” বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। “পাথওয়ে” এর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। “পাথওয়ে” এর মূল লক্ষ্য দেশের পিছিয়ে থাকা হতদরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া। এ লক্ষ্যে “পাথওয়ে” আর্তমানবতার সেবায় পবিত্র মাহে রমজানে ইফতার বিতরণের এক বিশেষ পরিকল্পনা ও কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
মহান আল্লাহ তা’য়ালার অসীম করুনা, মুক্তি ও নাজাতের বার্তা নিয়ে প্রতি বছর আসে পবিত্র মাহে রমজান। আমাদের দেশে অসংখ্য অসহায় ও দরিদ্র মানুষের বসবাস, তাঁরা সারাদিন রোজা রাখেন কিন্তু তাদের অনেকের পক্ষে ইফতার কেনার সামর্থ্য হয় না। এছাড়াও অনেক পথচারীর চলার পথে ইফতার করার সময় ও সুযোগ হয় না। ঐ সকল রোজাদারদের মাঝে ইফতার বিতরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা হতে কিছু করতে চেষ্টা করছি। আর তাই সেই লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনাল, রেলষ্টেশন, বস্তি এলাকায় মাসব্যাপী আমাদের ইফতার, সেহেরি ও শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলবে ইন্শাল্লাহ।
“পাথওয়ে” দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে আমরা সবাই যদি আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসি তাহলেই একদিন ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত শান্তিময় এক মানবিক বাংলাদেশ সু-প্রতিষ্ঠিত হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
অসহায় এতিম মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে ইফতার ও সেহেরি বিতরণঃ
বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার দু’টি প্রধান ধারা- আলিয়া এবং কওমি। এছাড়া হাফেজিয়া, ফোরাকানিয়া ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা আছে। আলিয়া এবং কওমি মাদ্রাসা দুটোই সরকার স্বীকৃত। বাংলাদেশের প্রধানত মসজিদকে কেন্দ্র করেই কওমি মাদ্রাসাগুলো গড়ে উঠেছে। এই মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রধানত আবাসিক, লিল্লাহ বোডিং-এর আওতায় তাদের থাকা, খাওয়া এবং পড়াশুনার খরচ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই বহন করে। তবে তারা সরকারি কোনো সহযোগিতা বা অনুদান নেয় না। মুসলমানদের যাকাত, ফিতরা, কোরাবানির চামড়া, অনুদানের টাকায়ই মাদ্রাসাগুলো সাধারনত পরিচালিত হয়।
এসকল মাদ্রাসায় শিক্ষা নিতে আসা অধিকাংশ ছাত্ররাই নিম্নমধ্যবিত্ত কিংবা অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। মাদ্রাসায় তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদসহ অন্যান্য খরচ বহন করে। তাই অনেক অস্বচ্ছল পরিবার মাদ্রাসায় পড়ানোর আগ্রহ দেখায়। তবে সকল মাদ্রাসায় অনুদান ও সহযোগিতার অর্থ পর্যাপ্ত না হওয়ায় ছাত্রদের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়ে উঠে না। আবার অনেক মাদ্রাসায় ছাত্রদের খাবারের মানও ততোটা মানসম্মত নয়। আমাদের মুসলিম সমাজ ব্যবস্থার ভিত মজবুত রাখার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একদিন আলোর পথ দেখাবে এসকল ছোট্ট কান্ডারীরা। তাই আমাদের উচিৎ তাদের মৌলিক অধিকারের উপর সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সকলে নজরদারী বাড়ানো। কারন সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করার সময় যেন তারা অনাহারে না থাকে। কারো সুন্দর পোশাক দেখে যেন তাদের বুক দীর্ঘশ্বাসে ভরে না যায়। তারা যেন খুশি মনে সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করতে পারে। আর তাই ঐ সকল মাদ্রসা শিক্ষার্থীদের সহায়তা সমাজের বৃত্তবান মানুষ হিসেবে করতে পারি আমরা সকলে। সামনে আসছে বহুল বরকতময় মাস রমজান। আসুন আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে মন খুলে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করি এবং রমজান মাসের পবিত্রতা পালন করি।
https://pathwaybd.org/iftar-donation
অসহায় ও গরিব পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণঃ
করোনা মহামারির এই দুর্যোগ মুহুর্তে সমাজের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের আর্তসামাজিক অবস্থা অনেকটাই সংকটাপন্য পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি জীবন জীবিকা ও পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোও খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে সাধারনের পক্ষে।
মহান আল্লাহ তা’য়ালার অসীম করুনা, মুক্তি ও নাজাতের বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবারও আসছে পবিত্র মাহে রমজান অর্থাৎ সিয়াম সাধনার মাস। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সমস্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। কেননা মানুষে মানুষে সাহায্য সহযোগিতা সহমর্মিতা ও সমবেদনা প্রদর্শনের এটিই অন্যতম সুযোগ। নবী করিম (সা.) যথার্থই বলেছেন, ‘এ মাস (রমজান) সহানুভ‚তি প্রদর্শনের মাস।’ (মিশকাত)
তাই আসুন আমরা সকলে পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা পালন করি এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একে অপরের মাঝে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে ধনী-গরীবের ব্যবধান ভুলে গিয়ে ভালোবাসার সেতু বন্ধন তৈরী করি।
পথিক, মুসুল্লি, অন্ধ ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে ইফতার বিতরণঃ
মহান আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীর সব কিছুর সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সেরা জীব হিসেবে মানুষকে তৈরি করেছেন। আল্লাহ তার ইবাদতের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তার ইবাদতের মধ্যে উত্তম মাধ্যম হলো রোজা বা সিয়াম সাধনা। প্রত্যেক বছর এই সিয়াম বা রোজাকে কেন্দ্র করে পাথওয়ে ইফতার বিতরণের পরিকল্পনা থাকে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য। পাথওয়ে পথিক, মুসুল্লি, অন্ধ ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করে। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের সঙ্গে সদআচরন, সাহায্য সহযোগীতা এবং কোন কিছুতে তাদেরকে অগ্রাধীকার দেওয়া উচিৎ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর। (বুখারি ও মুসলিম)
মহান আল্লাহ তা’য়ালারর অসীম করুনা, মুক্তি ও নাজাতের বার্তা নিয়ে প্রতি বছর আসে পবিত্র মাহে রমজান। ইসলামের শিক্ষা ও মূল্যবোধকে লালন করে বিগত বৎসরের ন্যায় এবারও
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ের উদ্যোগে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাসব্যাপী পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে ইফতার বিতরণের এক বিশাল কর্মসুচী গ্রহন করা হয়েছে। সারাদিনের রোজা রাখার পর সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্টি, পথযাত্রী ও ছিন্নমুল মানুষদের জন্য পাথওয়ের এই মহতী উদ্যোগ।
পাথওয়ে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক আমরা যদি আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ অনুযায়ী মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য কিছু করি তা হলে আমাদের সমাজ হতে দারিদ্রতা দুর হবে এবং একটি ন্যায়-ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ গুলো যাতে সারা দিনের রোজা রাখার পর সামান্য ইফতার কেনার সামর্থ হয় না, স্বাস্থ্য সম্মত ইফতার তাদেও নিকট পৌছে দেওয়ার জন্যই পাথওয়ের এই প্রয়াস। মাসব্যাপী পবিত্র রজমানে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জনবসতিপূর্ণ বাস টার্মিনাল, বাজার ও বস্তি এলাকায় আমাদের এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রায় দুই কোটি লোকের বসবাস।
এই বিপুল জনগোষ্টির মধ্যে বাস টার্মিনাল, বাজার ও বস্তি এলাকায় ইফতারের সময় অনেকেই সময় মত ইফতারের সংস্থান করতে ব্যর্থ হন আমরা ঐ সকল লোকদের মধ্যে সময় মত ইফতার পৌছে দেয়ার লক্ষ্যেই মূলত: আমাদের এই কার্যক্রম। এছাড়া আমরা ঢাকা শহরের অসংখ্য প্রতিবন্ধীদের জন্য ও বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায়ও ইফতার বিতরণ করে থাকি। আমাদের সমাজে সাধারণত: প্রতিবন্ধীদেরকে অবহেলা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে দেখি থাকি।
তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষন ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে পরিচর্চা করে তাদেরকেও দেশের দক্ষ জনশক্তিতে পরিনত করা যায় এবং এর মাধ্যমে আমরা একধরনের আত্মশুদ্ধি ও পূণ্যের কাজ করতে পারি। বাংলাদেশের অসংখ্য পরিবার তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য মাদ্রাসা গুলিতে ভর্তি করা হয়, সেখানে শিক্ষার্থীরা পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারনে অনেক সময় ভাল স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হতে বঞ্চিত হয়। পাথওয়ের উদ্যোগে ঐ সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
পাথওয়ে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে এই সকল শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরিবার ও সমাজের জন্য ইহকাল ও পরকালের নাজাতের উছিলা হিসাবে কাজ করবে। বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চলের নদীতে প্রতি বৎসর মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস ডিম ওয়ালা মাছ সংরক্ষনে মৎস শিকারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে উক্ত অঞ্চলের জেলে পরিবার গুলি এ সময়ে অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করে থাকে তাই পাথওয়ের পক্ষ থেকে এই সময়ে ঐ সকল জেলে পরিবারের মধ্যে দৈনন্দিন খাদ্য চাউল, ডাউল ও আটাসহ খাদ্য সামগ্রী ও বিভিন্ন ঈদ ও অন্যান্য উৎসবে পুরুষদের মাঝে লুঙ্গি ও পায়জামা-পাঞ্জাবি এবং মহিলাদের মধ্যে শাড়ী কাপড় ও বাচ্চাদের মাঝে শিশু পোষাক বিতরণ করে থাকি এবং ঈদে তাদের মাঝে পোলাউয়ের চাউল, সেমাই, চিনি ইত্যাদি বিতরণ করে থাকি। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ দিয়ে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করে যাচ্ছি।
ঐ সকল রোজাদারদের মাঝে সামান্য ইফতার বিতরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা হতেই আমাদের এই প্রয়াস। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করার তৌফিক দান করুন, আমীন।