মানবতার খাতিরে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি অলাভজনক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোকে আমাদের দেশের হিজরা বা থার্ড জেন্ডাররা পাশে চায়। তাদের এই অসহায়ত্বের শেষ নেই। না ঠাই দেয় তাদের পরিবার না সমাজ । এজন্য তারা রাষ্ট্রের অগ্রণী ভূমিকার মুখাপেক্ষি থাকে সবসময়। তাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাইতো নানান অভিযোগ তুলে ধরেন তারা। তাদের অভিযোগের অন্যতম হচ্ছে কর্মসংস্থান নেই। তাইতো এই হিজরা বা ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের অসহায় ভাই বোনেরা তাদের যথাসম্ভব জীবনাচার-সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিসহ নানা কৌশলে সাধারন মানুষের কাছে হাত পেতে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যা তাদের নিজেদেরকেও ভাল লাগে না বলে আমাদেরকে জানান । শুধু তারা নয় লকডাউনে সবাই ঘরের মধ্যে জেলখানার জীবন-যাপন করছিলো । এই পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটে পড়ে যায় বিশেষ করে কর্মহীন হিজরা সম্প্রদায় ।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে জনসাধারণের চেয়ে তা কষ্ট বা ভোগান্তিটা অনেকাংশে বেশি। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অসহায়, দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের মাঝে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সরকারি সহায়তা আসলেও ঢাকার মিরপুরে হিজড়াদের বা থার্ড জেন্ডারদের মাঝে কোনো খাদ্য, অর্থ বা ত্রাণ কেউ নিয়ে আসেনি। পাথয়ের ডাটা অনুযায়ী মিরপুর ৩ নং বিল্ডিং এলাকায় বসবাসরত সানু হিজড়া তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, মাত্র ১০/১২ বছর বয়স থেকেই সে তার পরিবার থেকে আলাদা। আর প্রায় প্রত্যেক হিজড়াদেরকেই এই সমাজ থেকে এমন বয়সেই সমাজচ্যুত করে এই একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষিত সমাজ।
আর তখন থেকেই প্রত্যেক হিজড়াদের জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়, আর শুরু হয় সীমাহীন কষ্টের জীবন। থাকতে হয় ভাড়ার বাসায় আর প্রতি মাসে ভাড়া ঠিকই দিতে হয় কিন্তু আমাদের ইনকামের অবস্থা ভাল না, দিন দিন কমছে। করোনাকালীন লকডাউনের সময় পাথওয়ে আমাদেরকে ১০/১৫ দিন খাবার দিয়েছে কিন্তু তা আসলে পর্যাপ্ত না, আমরা সরাকারীভাবে অনুদান বা খাদ্য সহায়তা চাই।“
এছাড়াও ঢাকার মিরপুর কালশী এরিয়ায় বসবাসরত সূচনা নামে আরেকজন হিজড়া তার অসহায়ত্বের কথা কান্না করতে করতে তুলে ধরেন।
করোনার এই লকডাউনের সময় অনেকেই সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও আমাদের জন্য কেউ এগিয়ে আসে নি। মিরপুরে অবস্থিত একটি অলাভজনক সংস্থা- পাথওয়ে ই একমাত্র আমাদেরকে খাবার সরবরাহ করেছে। কিন্তু একসময় তারাও হিমশিম খায়। “আমরা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন জানাই, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি যেন আমাদের হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি একটু সদয় দৃষ্টি দেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাস্থসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে পাথওয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করা হয়। ফ্রি মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণসহ জনসাধারণকে সচেতন করতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন বা প্রচারকার্য চালায়।
লকডাউনে সরকার যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে তখন পাথওয়ে শুধু হিজড়াদের নয় , অসহায়-দরিদ্র ও কর্মহীন সাধারণ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করে। কষ্টে থাকা হিজড়া সম্প্রদায় এর প্রতি সদয় দৃষ্টি দেয় পাথওয়ে । তাদেরকে পুরো মাসব্যাপী খাদ্য সহায়তা দেয়।
এছাড়াও তাদেরকে স্বাবলম্বী করতে পাথওয়ে হাতে নিয়েছে কিছু ফ্রি স্কিল ট্রেইনিং কোর্স; হাত সেলাই প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং প্রইশিক্ষণ কোর্স, বিউটিসিয়ান কোর্স ইত্যাদি। পাথওয়ে ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল থেকে ফ্রি ড্রাইভিং কোর্স প্রদানের পাশাপাশি তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তিতে সরকারী খরচটাও পাথওয়ে বহন করে। বরাবরের মতই পাথওয়ে তাদের পাশে ছিলো এখনো আছে ভবিষ্যতেও থাকবেই ইন শা আল্লাহ।
মহামারী করোনাকালীন সময়ে জনসাধারণের বন্ধু হিসেবে যারা রাতদিন পরিশ্রম করে দেশের জন্য কাজ করছে সেই পুলিশ সদস্যদেরকেও রমজানে ইফতার বিতরণ করেছে ‘পাথওয়ে’ ।
পাথয়ের নির্বাহী পরিচালক জনাব মো. শাহিন এরকম আরো অনেক মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। করোনায় অসুস্থ রোগীদের নিজস্ব গাড়ির মাধ্যমে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। পাথওয়ের স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে অন্যের উপকারে লিপ্ত থাকে। এমনকি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির গোসল থেকে শুরু করে কাফন-দাফনের ব্যবস্থাও করছে পাথওয়ে। পুরোপুরি কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী ইসলাম ধর্মের নিয়ম কানুন অনুসরণ করে কাফন-দাফন তথা কবরস্থ করছে স্বেচ্ছাসেবকরা।
হিজরা, ট্রান্সজেন্ডার বা ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের পাশে পাথওয়ে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। হিজরাদের পাশে দাড়ালেন পাথয়ের স্বেচ্ছাসেবীরা।